বিজ্ঞানী আমির হোসেনের যত আবিষ্কার

423জ্বালানি ছাড়াই চলবে গাড়ি। তেল ও গ্যাস কিছুই লাগবে না। শুনে হয়তো বিস্মিত হচ্ছেন! কিন্তু এটাই সত্যি, একটুও গল্প নয়।

 

স্বল্প খরচে জিপের অদলে তৈরি এই গাড়ি ঘণ্টায় আবার ৮০ কিমি বেগে চালানো সম্ভব। জ্বালানি লাগে না বলে কালো ধোঁয়ার বের হয় না। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব করে তৈরি এ গাড়ি। আর এ গাড়িটি আবিষ্কার করেছেন বগুড়ার যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন। তিনি গাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘ ROFH-ROFH TAHIAA’ বাংলায় ‘দ্রুততম সুন্দর’।

 

শুধু এই গাড়িই নয়, অটোব্রিকস মেশিন, ধান কাটা মেশিন, ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড মেশিন, অটো জৈব ও মিশ্র সার তৈরির মেশিন, বিদ্যুৎচালিত গাড়িসহ অনেক ধরনের পরিবেশবান্ধব যন্ত্র তৈরি করে চলছেন যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন।

 

এই বিস্ময়কর লোকটি ১৯৯১ সালে ইট ও পাথর ভাঙা মেশিন উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এছাড়াও ১৯৮০ সালের দিকে তিনি প্রথম শ্যালো মেশিনের লাইনার-পিস্টন তৈরি করেন। তখনকার সময় যার দাম ছিল চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর তার উদ্ভবান করা লাইনার-পিন্টনের দাম মাত্র আড়াইশ টাকা। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক তৈরি করেছেন বিভিন্ন মেশিন।

 

আবিষ্কারক আমির হোসেনের পরিচতি : পুরো নাম আমির হোসেন। তার বাবা বগুড়া শহরের ঠিকাদারপাড়া লেনের ধলু মেকার প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন ১৯৪০ সালের দিকে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তৎকালীন বগুড়ার ডিসির নির্দেশে ধলু মেকার সতর্কতামূলক সাইরেন মেশিন তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই ধলু মেকার নিজেই হস্তচালিত লেদ মেশিন তৈরি করে বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গে আলোচনায় আসেন। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৩ নভেম্বরে মারা যাওয়ার পর রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের দায়িত্ব নেন ছেলে আমির হোসেন। বর্তমানে ওয়ার্কশপটি ওই এলাকায় রয়েছে

আমির হোসেনের হাতেখড়ি হয় তার বাবা ধলু মেকারের কাছে। ধলু মেকারের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে আমির হোসেন চতুর্থ। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় গবেষণা। প্রকৌশলী আমির হোসেন ২০০৩ সালে বুয়েট থেকে বিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ও জিটিজেড থেকে কৃষি সামগ্রী উদ্ভাবনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এ কাজে আমির হোসেনকে সাহায্য করেন তার দ্বিতীয় মেয়ে আসমা খানম আশা ও তৃতীয় মেয়ে তাহিয়া খানম। এ পর্যন্ত তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার ও সনদ পেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন।

 

জ্বালানিবিহীন গাড়ি : দীর্ঘ এক বছর গবেষণার পর তিনি এ কাজে সফল হন। তার উদ্ভাবিত পাঁচ আসনবিশিষ্ট এবং ২৫০ কেজি ওজন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়িটি চালাতে কিছুই লাগে না। না মবিল তেল, না গ্যাস। বিশেষ করে গাড়িটির ব্যাটারি মাত্র একবার চার্জ দিলেই পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ হয়ে যায় এবং গাড়িটি চালিত অবস্থায়ও চার্জ হতে থাকে। সবমিলিয়ে, মাত্র ২৫ টাকায় আট ঘণ্টা চলার খোরাক হয়ে যায় এই গাড়িটিতে। গাড়িটির গতিশক্তির উৎস হিসেবে ৬০ ভোল্ট বৈদ্যুতিক টারবাইন মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটি চালানো খুবই সহজ। গাড়িটির যাবতীয় বিষয়াদি যেমন, গাড়ির গতি ও অন্যান্য অনেক কিছুই দেখা যাবে চালকের সামনে অবস্থিত মনিটরে। কোনো জটিল প্রকৌশলীবিদ্যা বা দুরূহ কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার না করায় গাড়িটি একদম ঝুঁকিহীন। ইতিমধ্যেই গাড়িটির তিনটি মডেল বের হয়েছে। এর মধ্যে দুটি গাড়ি এবং একটি বাস। সাধারণ একটি পাঁচ আসনবিশিষ্ট বিদেশি গাড়ি কিনতে হলে অন্তত ১০ লাখ বা ১৩ হাজার মার্কিন ডলার প্রয়োজন পড়ে, অথচ মাত্র ২ লাখ টাকা বা ২৫০০ মার্কিন ডলার খরচ করেই আমির হোসেন তৈরি করেছেন এই গাড়িটি।

অটোব্রিকস মেশিন : ২০০৩ সালে আমির হোসেন বানিয়েছেন অটোব্রিকস তৈরির মেশিন, যা চীনের তৈরি অটোব্রিকস মেশিনের চেয়ে উন্নত। এই মেশিনটি চলতি বছর আরো আধুনিক করা হয়েছে। আগে তৈরি করা মেশিনটি বিদ্যুৎ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে চলত। এবারেরটি বিদ্যুৎ ছাড়া। মেশিনটি তৈরি করা হয়েছে দুটি শ্যালো মেশিন দিয়ে। জনবল লাগবে মাত্র ২০ জন। প্রতি ঘণ্টায় ইট তৈরি হবে ১৫০০ থেকে ২০০০টি। জ্বালানি তেল লাগবে তিন লিটার। মেশিনটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। ইটের গুণগতমান বিদেশি মেশিনের মতোই। দুই সাইজের মেশিনের মধ্যে একটি মুভিং সিস্টেম রয়েছে, যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে নেওয়া যাবে। দাম ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা।

 

ধানকাটা মেশিন : হালকা ও সস্তা ধান কাটার মেশিন তৈরি করেছেন প্রকৌশলী আমির হোসেন। দুই ঘণ্টায় এক বিঘা জমির ধান কাটা যাবে এ মেশিন দিয়ে। খরচ হবে দুই লিটার পেট্রোল। মেশিনটির ওজন ১০-১৫ কেজি। দাম ৮-১০ হাজার টাকা। সোলার পাওয়ারের সাহায্যে মেশিন চালানোর সম্ভব। যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য হলো- ধানের গাছ যে অবস্থায় থাক না কেন সে অবস্থায়ই কাটা যায়। এ মেশিন আরো সস্তা ও আধুনিক করার জন্য কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সহযোগিতা চেয়েছেন আমির হোসেনঅটো জৈব ও মিশ্র সার : অটো জৈব ও মিশ্র সার মেশিন তৈরি করে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন আমির হোসেন। মেশিনটি শ্রেণিভেদে দাম দেড় লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। মেশিনের প্রকারভেদে সার উৎপন্ন হয় ১০০ কেজি থেকে এক টন পর্যন্ত। এরই মধ্যে এ জৈব ও মিশ্র সার তৈরির মেশিনটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও দিনাজপুর জেলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। সুফলও পাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরাও।

 

ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড : আধুনিক মানে তৈরি করেছেন ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড। প্রকারভেদে এ মেশিনগুলোর মূল্য ২৫ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে অটো মেশিন, যার সুফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফিশ ও পোলট্রি ফিড ব্যবসায়ীরা ভোগ করতে শুরু করেছেন

ভুট্টা মাড়াই মেশিন : এই মেশিনটি দিয়ে ঘণ্টায় ৫০ মণ ভুট্টা মাড়াই সম্ভব। বিদ্যুৎ এবং ডিজেল উভয়চালিত যন্ত্র এটি। তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে সেসব ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র পাওয়া যায় তার মূল্য ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।

 

পাট প্রক্রিয়া জাতকরণ মেশিন : এটি বিদ্যুৎ এবং ডিজেল উভয় চালিত মেশিন। এই মেশিন পাটকাঠি থেকে পাটের আঁশ নিখুঁতভাবে আলাদা করে ফেলে। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার টাকা।  কিন্তু বাজারে অন্যান্য কোম্পানির বাজার মূল্য হলো সর্বনি¤œ আড়াই লাখ টাকা।
পাম প্রসেসিং মেশিন : এটি দিয়ে খুব সহজে পাম ফল প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব। এতে করে পাম থেকে তেল উৎপাদন সম্ভব। এটি তৈরিতে মাত্র আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা এই মেশিনের বাজার মূল্য ১৫ লাখ টাকা।

আমির হোসেন জানান, অনেক কিছুই তিনি নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন। এগুলো করতে গিয়ে কখনো গচ্ছিত টাকা, কখনো স্ত্রীর গয়না বিক্রি, কখনো ঋণ করতে হয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতা পাননি। এমনকি ব্যাংকও এসব গবেষণা কাজে কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। আর এসব যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের ফলে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আর আমদানি করতে হবে না।

 

তিনি মনে করেন, যারা নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চায় তাদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।

ধামাকা অফার চলছে !BRAND BAZAAR এ LED / 3D/ Smart / 4K TV AC , 40- 65% ডিস্কাউন্ট  !
আরও পন্য দেখতে ছবির উপরে ক্লিক করুন3d

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment